চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে পাশ করার পর চাকরির জন্য দীর্ঘ সময় ঘুরে বেড়ানো নতুন কিছু নয়।বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কত সে বিষয়ে কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না।তবে এর সংখ্যা যে একেবারে কম নয় সেটি দেখা যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগের সময়। হোক তা সরকারি কিংবা বেসরকারি।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেছেন খোদেজা আক্তার টুম্পা। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেও এখনও কোন সাড়া মেলেনি টুম্পার।
তিনি বলেন “সবাই শুধু অভিজ্ঞতা চায়। আমি যদি চাকরি না পাই তাহলে অভিজ্ঞতা হবে কি করে?” চাকরি খোঁজার অভিজ্ঞতা নিয়ে এভাবেই এক ধরনের হতাশা প্রকাশ করলেন টুম্পা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ব্যবসায় প্রশাসনে` স্নাতক মাহমুদ হোসেন বলেন, চাকরির বাজারে অনেক বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়া পেয়েছেন। কিন্তু প্রত্যাশার তুলনায় ‘খুবই কম’ বেতন হওয়ায় তিনি যোগদান করেননি। মি: হোসেন বলেন, “এখনও বুঝতে পারছি না যে আমি কোন দিকে যাচ্ছি। এ নিয়ে আমি আসলে কনফিউজড।”
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক পাশ করে যারা বের হচ্ছেন তাদের অনেকেরই কর্মজীবন নিয়ে খুব একটা পরিকল্পনা নেই।কি চাকরি করবেন কিংবা কোন পেশায় যাবেন তার সুষ্পষ্ট কোন চিত্র অনেকের সামনে নেই। চাকরি-প্রার্থীরা বলছিলেন বাস্তবতাই এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
মো: বেলাল হোসেন সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের ছাত্র। তিনি মনে করেন বর্তমানে চাকরি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হলেও সেটির মাধ্যমে খুব কম নিয়োগ হয়। সবাই শুধু অভিজ্ঞতা চায়। আমি যদি চাকরি না পাই তাহলে অভিজ্ঞতা হবে কি করে? তিনি বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোক ছাড়া চাকরি হয়না। আমার পরিচিত অনেকে ভালো রেজাল্ট করে বসে আছে আবার অনেকে দুর্বল ফলাফল করেও ভালো চাকরি পেয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন ছাত্র ডালিম হোসেন বলেন, “যতই লবিং থাকুক না কেন, যারা মেধাবী তাদের ঠেকিয়ে রাখা যায় না। তারা ভালো চাকুরি পাবেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শান্তি ও সংঘর্ষ‘ বিভাগে পড়ছেন শামিন হোসেন। চাকরির বাজারের অবস্থা নিয়ে তিনি চিন্তিত। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পড়াশুনার বিষয়ের সাথে মিলিয়ে চাকুরি পাওযা খুব কঠিন। তবে আমি বিসিএস ক্যাডার হতে চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল ওয়াদুদ ফারুক চাকরিকে সোনার হরিণের সাথে তুলনা করলেন। তবে তিনি মনে করেন চাকুরির বাজারে মেধাবীদের ভালো সুযোগ অবশ্যই আছে। কিন্তু তিনি বলেন, “তবে মামা না থাকলে চাকরি হয়না এটাও সত্যি কথা।”
জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইনে চাকরি খোঁজা
বাংলাদেশে সাধারণত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা চাকরি খোঁজেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে চাকরি খোঁজাও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনলাইনে চাকুরির বিজ্ঞাপন দেয়া হয় সাধারণত বেসরকারী চাকরির জন্য। বাংলাদেশে এক সময় চাকরি খোঁজার একমাত্র মাধ্যম ছিল খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। অনলাইনে চাকরি খোঁজা এখন একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চাকুরির মেলার মাধ্যমেও সীমিত পরিসরে কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে।
অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান বিডিজবসের কর্মকর্তা প্রকাশ রায় চৌধুরী বলছেন, তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ৩০,০০০ ব্যবহারকারী চাকরির খোঁজ করেন। মি: চৌধুরী এ বিষয়টিকে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন বলে উল্লেখ করছেন। তবে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এসব বিজ্ঞাপন শুধুই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য।
চাকরিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেদে তারতম্য
চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেদে রয়েছে তারতম্য। বেশিরভাগ প্রার্থীকে চাকরি খোঁজার জন্য বিজ্ঞাপনের দ্বারস্থ হতে হলেও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ রয়েছে যেখান থেকে চাকরি পাওয়া খুব একটা দুষ্কর নয়। দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলগুলোই সেরকম।
নানাভাবে প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে চাকরির মেলা বা `জব ফেয়ার` আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ তৈরির চেষ্টা করা হয়। তবে সেটি চাকরির বাজারের সামগ্রিক চিত্র নয়।
বেসরকারি খাতের কিছু প্রতিষ্ঠান এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্যবসায় প্রশাসন` ইন্সটিটিউট থেকে শিক্ষার্থীদের সরাসরি চাকরি দিয়ে থাকে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় বিভাগগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের দ্রুত চাকরির ব্যবস্থা করতে নানা আয়োজন বা পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু এ সুযোগ বিশেষ কিছু বিভাগের জন্য।
বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চাকুরির নিয়োগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট, বা আইবিএ। এর পরিচালক জি. এম. চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন বিভাগ থেকে ডিগ্রি নিয়েছে সেটি চাকরির বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মি: চৌধুরী বলেন, “আমাদের ইন্সটিটিউটের প্রায় সবাই পড়াশুনা শেষ করার সাথে সাথে কিংবা তারও আগে চাকরি পেয়ে যায় এবং গড়ে প্রাথমিক বেতন পায় পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো।” মি: চৌধুরী বলেন, তাদের শিক্ষার্থীদের কেরিয়ার নিয়ে প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে নিয়মিত আলোচনা হয়।
কিন্তু এটি সামগ্রিক চিত্র নয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেও চাকুরির আশায় দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করা এখন সাধারণ বিষয়।
চাকরির বাজারে বেসরকারি খাত এখনও বড়
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও চাকরির জন্য বেসরকারি খাতই বড়।বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৈরি পোশাক ও এর সাথে সংশ্লিষ্টখাতেই সবচেয়ে বেশি চাকরি রয়েছে।
বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিক রেজাউল হক বলছেন, সাধারণত চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়েই তার প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগ করা হয়। তিনি বলেন, “তবে পরিচিতজন বা রেফারেন্সের মাধ্যমেও দু’একটা চাকরি হয়।”চাকরি দেবার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাও একটি বড় বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেক্ষেত্রে চাকরি-প্রার্থী কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছে সেটিও একটি বড় বিবেচ্য বলে উল্লেখ করেন মি: হক। তিনি বলেন, “কোন চাকরি প্রার্থী যদি কোন ভাল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে তাহলে আমরা স্বাভাবিকভাবে ধরেই নিই সে ভালো হবে। তবে তার পাশাপাশি প্রার্থীর আচার আচরণ এবং স্মার্টনেসও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
সরকারি চাকরিতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা
তবে প্রথম শ্রেনীর সরকারি চাকরি পাবার বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। আবেদনের পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। একই সাথে সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগও বেশ পুরোনো, যদিও এসব অভিযোগ মানছেন না কর্মকর্তারা। প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের বাছাই করে সরকারি কর্ম কমিশন। এর চেয়ারম্যান ড: সা’দত হুসাইন বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা সবচেয়ে ভালো ফলাফল করছে তারা সরকারি চাকরিতে খুব একটা আসেন না।তিনি বলেন, কিছু পদের জন্য ৭০,০০০ থেকে ৮০,০০০ আবেদনপত্র জমা পড়লেও কোন কোন পদের জন্য মাত্র কয়েকটি আবেদপত্র জমা পড়ার নজিরও আছে।
কাষ্টমস এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার জন্য বেশি আবেদনপত্র জমা পড়ে বলে পাবলিক সার্ভিস কমিশন বলছে। ড: হুসাইন বলেন, “যেসব পদে অন্য কোন সুযোগ সুবিধা নেই বলে মনে করা হয় সেসব পদের জন্য কম আবেদনপত্র জমা পড়ে।”কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, যারা লিখিত পরীক্ষায় ভালো করে তারাই মৌখিক পরীক্ষায় আসে। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “মৌখিক পরীক্ষায় আমরা প্রার্থীর প্রেজেন্টশন এবং নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা এসব বিষয় লক্ষ্য করি। তবে সাধারণত দেখা যায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো পড়াশুনা হয় বলে ধারণা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রার্থীরাই পরীক্ষায় ভালো করে।”
বাংলাদেশে গত এক দশকে শিক্ষিতদের জন্য চাকরির সুযোগ যতটা বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে সরকারি ও বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে আসছে। সামনের দিনগুলোতে চাকরির বাজার আরও অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে পাশ করার পর চাকরির জন্য দীর্ঘ সময় ঘুরে বেড়ানো নতুন কিছু নয়।বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কত সে বিষয়ে কোন পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না।তবে এর সংখ্যা যে একেবারে কম নয় সেটি দেখা যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগের সময়। হোক তা সরকারি কিংবা বেসরকারি।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেছেন খোদেজা আক্তার টুম্পা। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করেও এখনও কোন সাড়া মেলেনি টুম্পার।
তিনি বলেন “সবাই শুধু অভিজ্ঞতা চায়। আমি যদি চাকরি না পাই তাহলে অভিজ্ঞতা হবে কি করে?” চাকরি খোঁজার অভিজ্ঞতা নিয়ে এভাবেই এক ধরনের হতাশা প্রকাশ করলেন টুম্পা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ব্যবসায় প্রশাসনে` স্নাতক মাহমুদ হোসেন বলেন, চাকরির বাজারে অনেক বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়া পেয়েছেন। কিন্তু প্রত্যাশার তুলনায় ‘খুবই কম’ বেতন হওয়ায় তিনি যোগদান করেননি। মি: হোসেন বলেন, “এখনও বুঝতে পারছি না যে আমি কোন দিকে যাচ্ছি। এ নিয়ে আমি আসলে কনফিউজড।”
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক পাশ করে যারা বের হচ্ছেন তাদের অনেকেরই কর্মজীবন নিয়ে খুব একটা পরিকল্পনা নেই।কি চাকরি করবেন কিংবা কোন পেশায় যাবেন তার সুষ্পষ্ট কোন চিত্র অনেকের সামনে নেই। চাকরি-প্রার্থীরা বলছিলেন বাস্তবতাই এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
মো: বেলাল হোসেন সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের ছাত্র। তিনি মনে করেন বর্তমানে চাকরি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হলেও সেটির মাধ্যমে খুব কম নিয়োগ হয়। সবাই শুধু অভিজ্ঞতা চায়। আমি যদি চাকরি না পাই তাহলে অভিজ্ঞতা হবে কি করে? তিনি বলেন, “অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোক ছাড়া চাকরি হয়না। আমার পরিচিত অনেকে ভালো রেজাল্ট করে বসে আছে আবার অনেকে দুর্বল ফলাফল করেও ভালো চাকরি পেয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন ছাত্র ডালিম হোসেন বলেন, “যতই লবিং থাকুক না কেন, যারা মেধাবী তাদের ঠেকিয়ে রাখা যায় না। তারা ভালো চাকুরি পাবেই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শান্তি ও সংঘর্ষ‘ বিভাগে পড়ছেন শামিন হোসেন। চাকরির বাজারের অবস্থা নিয়ে তিনি চিন্তিত। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পড়াশুনার বিষয়ের সাথে মিলিয়ে চাকুরি পাওযা খুব কঠিন। তবে আমি বিসিএস ক্যাডার হতে চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল ওয়াদুদ ফারুক চাকরিকে সোনার হরিণের সাথে তুলনা করলেন। তবে তিনি মনে করেন চাকুরির বাজারে মেধাবীদের ভালো সুযোগ অবশ্যই আছে। কিন্তু তিনি বলেন, “তবে মামা না থাকলে চাকরি হয়না এটাও সত্যি কথা।”
জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইনে চাকরি খোঁজা
বাংলাদেশে সাধারণত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা চাকরি খোঁজেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে চাকরি খোঁজাও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনলাইনে চাকুরির বিজ্ঞাপন দেয়া হয় সাধারণত বেসরকারী চাকরির জন্য। বাংলাদেশে এক সময় চাকরি খোঁজার একমাত্র মাধ্যম ছিল খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। অনলাইনে চাকরি খোঁজা এখন একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের চাকুরির মেলার মাধ্যমেও সীমিত পরিসরে কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে।
অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান বিডিজবসের কর্মকর্তা প্রকাশ রায় চৌধুরী বলছেন, তাদের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন ৩০,০০০ ব্যবহারকারী চাকরির খোঁজ করেন। মি: চৌধুরী এ বিষয়টিকে চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন বলে উল্লেখ করছেন। তবে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এসব বিজ্ঞাপন শুধুই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য।
চাকরিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেদে তারতম্য
চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেদে রয়েছে তারতম্য। বেশিরভাগ প্রার্থীকে চাকরি খোঁজার জন্য বিজ্ঞাপনের দ্বারস্থ হতে হলেও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ রয়েছে যেখান থেকে চাকরি পাওয়া খুব একটা দুষ্কর নয়। দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলগুলোই সেরকম।
নানাভাবে প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে চাকরির মেলা বা `জব ফেয়ার` আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ তৈরির চেষ্টা করা হয়। তবে সেটি চাকরির বাজারের সামগ্রিক চিত্র নয়।
বেসরকারি খাতের কিছু প্রতিষ্ঠান এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্যবসায় প্রশাসন` ইন্সটিটিউট থেকে শিক্ষার্থীদের সরাসরি চাকরি দিয়ে থাকে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় বিভাগগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের দ্রুত চাকরির ব্যবস্থা করতে নানা আয়োজন বা পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু এ সুযোগ বিশেষ কিছু বিভাগের জন্য।
বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চাকুরির নিয়োগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট, বা আইবিএ। এর পরিচালক জি. এম. চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীরা কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন বিভাগ থেকে ডিগ্রি নিয়েছে সেটি চাকরির বাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মি: চৌধুরী বলেন, “আমাদের ইন্সটিটিউটের প্রায় সবাই পড়াশুনা শেষ করার সাথে সাথে কিংবা তারও আগে চাকরি পেয়ে যায় এবং গড়ে প্রাথমিক বেতন পায় পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো।” মি: চৌধুরী বলেন, তাদের শিক্ষার্থীদের কেরিয়ার নিয়ে প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে নিয়মিত আলোচনা হয়।
কিন্তু এটি সামগ্রিক চিত্র নয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেও চাকুরির আশায় দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করা এখন সাধারণ বিষয়।
চাকরির বাজারে বেসরকারি খাত এখনও বড়
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও চাকরির জন্য বেসরকারি খাতই বড়।বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৈরি পোশাক ও এর সাথে সংশ্লিষ্টখাতেই সবচেয়ে বেশি চাকরি রয়েছে।
বেশ কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিক রেজাউল হক বলছেন, সাধারণত চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়েই তার প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগ করা হয়। তিনি বলেন, “তবে পরিচিতজন বা রেফারেন্সের মাধ্যমেও দু’একটা চাকরি হয়।”চাকরি দেবার ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাও একটি বড় বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। সেক্ষেত্রে চাকরি-প্রার্থী কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছে সেটিও একটি বড় বিবেচ্য বলে উল্লেখ করেন মি: হক। তিনি বলেন, “কোন চাকরি প্রার্থী যদি কোন ভাল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে তাহলে আমরা স্বাভাবিকভাবে ধরেই নিই সে ভালো হবে। তবে তার পাশাপাশি প্রার্থীর আচার আচরণ এবং স্মার্টনেসও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
সরকারি চাকরিতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা
তবে প্রথম শ্রেনীর সরকারি চাকরি পাবার বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। আবেদনের পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। একই সাথে সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগও বেশ পুরোনো, যদিও এসব অভিযোগ মানছেন না কর্মকর্তারা। প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের বাছাই করে সরকারি কর্ম কমিশন। এর চেয়ারম্যান ড: সা’দত হুসাইন বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা সবচেয়ে ভালো ফলাফল করছে তারা সরকারি চাকরিতে খুব একটা আসেন না।তিনি বলেন, কিছু পদের জন্য ৭০,০০০ থেকে ৮০,০০০ আবেদনপত্র জমা পড়লেও কোন কোন পদের জন্য মাত্র কয়েকটি আবেদপত্র জমা পড়ার নজিরও আছে।
কাষ্টমস এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার জন্য বেশি আবেদনপত্র জমা পড়ে বলে পাবলিক সার্ভিস কমিশন বলছে। ড: হুসাইন বলেন, “যেসব পদে অন্য কোন সুযোগ সুবিধা নেই বলে মনে করা হয় সেসব পদের জন্য কম আবেদনপত্র জমা পড়ে।”কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, যারা লিখিত পরীক্ষায় ভালো করে তারাই মৌখিক পরীক্ষায় আসে। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “মৌখিক পরীক্ষায় আমরা প্রার্থীর প্রেজেন্টশন এবং নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা এসব বিষয় লক্ষ্য করি। তবে সাধারণত দেখা যায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো পড়াশুনা হয় বলে ধারণা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের প্রার্থীরাই পরীক্ষায় ভালো করে।”
বাংলাদেশে গত এক দশকে শিক্ষিতদের জন্য চাকরির সুযোগ যতটা বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে সরকারি ও বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী চাকরির বাজারে আসছে। সামনের দিনগুলোতে চাকরির বাজার আরও অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
Comments
Post a Comment
Waiting for your replied